বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

চরাঞ্চলে আলো ছড়াচ্ছে তাসকিনা সিনথী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

বিদ্যালয় শব্দটিকে ভাঙলে বিদ্যা ও আলয়- এই দুটি শব্দ আসবে। এ দিয়ে বোঝানো হয় বিদ্যা বা শিক্ষার আবাসস্থল। তবে এ আবাস শুধু শিক্ষাকে ধারণ করে না, বরং ছড়িয়ে দেয় আলো। যা মানুষের ভেতরকে শিক্ষা বা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে। তেমনই আলো ছড়াচ্ছে পাবনার আমিনপুর থানার শ্যামপুর টাটী এলাকার বিদ্যা প্রতিষ্ঠান তাসকিনা সিনথী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পাঠদান পদ্ধতি ও শিক্ষার গুণগতমানে প্রতিষ্ঠার মাত্র সাত বছরেই কুড়িয়েছে ব্যাপক সুনাম। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষার প্রশ্নে অভিভাবকদের আস্থার জায়গায়ও দখলে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বেড়া উপজেলার কয়েকটি প্রত্যন্ত চর এলাকার প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে আসেন এই বিদ্যালয়ে। শিক্ষার প্রয়োজনীয় পরিবেশ, প্রাতিষ্ঠানিক ও একাডেমিক শৃঙ্খলার কারণে আশেপাশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিশেষত্ব। এর প্রতিফলন মিলেছে এসএসসি ২০২৪ এর ফলাফলে। বিজ্ঞান ও মানবিক দুটি শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ২৯ পরীক্ষার্থীর ৯ জনই পেয়েছেন জিপিএ ৫। এর মধ্যে গোল্ডেন জিপিএ ৫-ও রয়েছে।

বিদ্যালয় সুত্র জানায়, তাসকিনা সিনথী চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের অধীনে ২০১৭ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণির মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পথচলা শুর করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫০ জনের মত। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবুজ ক্যাম্পাসে পাঠদানের মাধ্যমে গড়েছেন অসংখ্য আলোকিত শিক্ষার্থী। যাদের আলোয় সক্ষমতার ঝুলি ভারী করে শিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে অদম্য গতিতে ছুটে চলছে বিদ্যালয়টি। সৃজনশীল ও নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার আধুনিক পরিবেশ গড়ে তুলতে নেয়া হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। যার দৃশ্যমান রুপ বিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস ও ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব। শৃঙ্খলা শেখাতে প্রয়োজনীয় শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের রয়েছে নিজস্ব ড্রেসকোড। একাডেমিক সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি দেয়া হয় ধর্মীয় শিক্ষা। ছেলে মেয়েদের নামাজ আদায়ের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা নামাজ ঘর।

এদিকে নানারকম ফ্যাসিলিটিজ ও শৃঙ্খলার বলয়ে নিজ সন্তানকে গুণগত আধুনিক শিক্ষায় মানুষ করার অভিপ্রায়ে সন্তানকে পড়াশোনা করাতে নিয়ে আসা অভিভাবককেরাও প্রকাশ করছেন সন্তুষ্টি। এমন পরিবেশে শিক্ষাগ্রহণে অধিক আগ্রহ দেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও। এছাড়া শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠদানের মান ধরে রাখতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।

৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আকরাম হোসেন খান বলেন, পেশায় আমি একজন প্রাইমারি শিক্ষক। শত কষ্ট মেনে নিয়েও অভিভাবক চায় তার সন্তান গুণগত শিক্ষায় সুশিক্ষিত ও মানুষ হোক। বাচ্চা ভর্তির আগে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম হয়তো এ প্রতিষ্ঠান সেটি করতে পারবে। ভর্তির পর যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ভুল করিনি। এখানকার শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠদানের মান যুগোপযোগী। এর ফলে পড়ালেখায় বাচ্চাদের আগ্রহও ভালোই দেখা যাচ্ছে।

এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক শিক্ষার্থীর বড়ভাই নাসিম জামান বলেন, আমার বোন এখানে দীর্ঘ সময় পড়ালেখা করেছে। সবশেষ গোল্ডেন এ প্লাস ফলাফল করে বের হচ্ছে। শুধু একাডেমিক রেজাল্ট নয় ধর্মীয় শিষ্টাচার ও আচরণগত শৃঙ্খলায়ও বোনের ইতিবাচক অর্জন পরিলক্ষিত হয়েছে। যার বড় কৃতিত্ব এ বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাবো বিদ্যালয়ের শিক্ষার এ পরিবেশ ও পাঠদানের পদ্ধতি ধরে রাখার পাশাপাশি সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেবার।

৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া বলেন, আমাদের শিক্ষকেরা যেভাবে আমাদের পড়ান তাতে পড়াকে বোঝা মনে হয় না। এর কারণে আমরা পড়াশোনায় আগ্রহ বেশি পাই। স্কুলের পরিবেশও আমাদের খুবই ভালো লাগে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সজীব বলেন, এই উপজেলায় যতগুলো বিদ্যালয় রয়েছে তাদের থেকে আমরা ভিন্ন থাকার চেষ্টা করি। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার দিকটাও আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখি। শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি চর্চা শেখাতে সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন এ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো হয়। পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে শিক্ষার সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তৎপর। সবমিলিয়ে চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের সেরা শিক্ষাটাই দিতে।

বিদ্যালয় নিয়ে আলাপ হয় তাসকিনা সিনথী চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদা সবুজের সাথে। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা বা পরিচালনার প্রবণতা এখন বেশি দেখা যায়। আমি সেই বলয়ের বাইরে থেকে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। শুধু অর্থ উপার্জন নয় সঠিক শিক্ষার আলো শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই এ বিদ্যালয় পরিচালনার বড় উদ্দেশ্য। আধুনিক শিক্ষার আদলে পাঠদান থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের সাধ্য অনুযায়ী পরিবেশ মেইনটেইন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। অল্প পরিসরে শুরু করলেও সময়ের সাথে এর পরিধি বাড়ছে। সঠিক শিক্ষাদানে এ প্রতিষ্ঠানকে আমরা আরো বহুদুর এগিয়ে নিতে পারব বলে আশা রাখছি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..